জাকারিয়া হোসাইন: অসময়ে শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিতে বগুড়া,শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সদ্য রোপনকৃত ইরি-বোরো ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি সরিয়ে না গেলে পানির নিচে ডুবে থাকা এসব ক্ষেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। রবিবার ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া টানা দু দিনের হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় এসব ফসলি ক্ষেত।
বুধবার (৯ আগষ্ট) সরেজমিনে শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ও কীচক ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিচু এলাকার বোরো ধানের জমিগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে ময়দানহাটা ইউনিয়নের চন্দ্রহাট্টা গ্রামের পঞ্চাশ একর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। দেখে সহজে বোঝার কোনও উপায় নেই সেগুলো কৃষি জমি। মনে হবে যেন পুকুর কিংবা বিল। অথচ পানির নিচে ডুবে থাকা প্রত্যেকটি জমিতে লাগানো আছে বোরো ধান। এসব ক্ষেত নষ্ট হলে ওই এলাকার অন্তত শত জন কৃষক অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চন্দ্রহাট্টা গ্রামের বর্গাচাষি জাফিরুল মন্ডল বলেন, আমি তিন বিঘা জমি আদি (বর্গা) নিয়ে উন্নত জাতের হাইব্রিড ধান লাগিয়েছি। চারা রোপণ করার মাত্র বিশ দিন হয়েছে। পুরো জমির ক্ষেত দুই দিন যাবত পানির নীচ তলিয়ে আছে। আমি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত প্রায় পনেরো হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসময় ধান ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক ফিরোজ সরকার বলেন, আমার পাঁচ বিঘা ধানের ক্ষেত ও এক বিঘা কলার বাগান পানির নিচে তলিয়ে আছে। ডুবে যাওয়ার দুই দিন হলো। আর কয়েকদিন এভাবে পানির নিচে থাকলে ধানের ক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
কৃষক মিনাজুল ইসলাম বলেন, আমার এক বিঘা ধানের জমি পানিতে ডুবে আছে। শ্রাবণ মাসে এরকম বৃষ্টি আমার জীবনেও দেখিনি। হঠাৎ বৃষ্টির কারণেই এসব ফসল তলিয়ে গেছে। এখানে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
একই অবস্থা জেলার অধিকাংশ নিচু এলাকার। টানা দুদিনের বৃষ্টিতে ধানের জমি ছাড়াও কৃষকের সবজির ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে জমি থেকে পানি সরে না গেলে সবজিতে পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো আল মুজাহিদ সরকার বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে শিবগঞ্জ উপজেলার তুলনামূলক কিছু নিচু জমির ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এখন আর বৃষ্টি না হলে কোনো জমির ফসল ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে, জাত ভেদে কোনো ধান ক্ষেত পাঁচ থেকে সাত দিন পানির নিচে তলিয়ে থাকলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসময় যেকোনো উপায়ে ক্ষেতের পানি নিষ্কাশন করতে কৃষকদের পরামর্শ দেন তিনি।