নাজমুল আদনান, ঘাটাইল প্রতিনিধি: উৎসব চলছে পাহাড় কাটার। প্রকৃতির আশির্বাদ লালমাটির পাহাড়ে কালো হাতের থাবা। পাহাড়ী মাটি দিয়ে প্রকাশ্যে চলছে ভরাট কাজ। এ দৃশ্য সবার চোখে পড়লেও যাদের দেখার দায়িত্ব তারা দেখছেন না, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে চালানো হয় লোক দেখানোর অভিযান। দিনের বেলার অভিযানে পাহাড় খেকোরা সাময়িকের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাতের অন্ধকারে তা পুষিয়ে নিচ্ছেন। এভাবেই দিনদিন ধ্বংস করা হচ্ছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ছোটছোট টিলাসহ সুউঁচ্চ পাহাড়। ফলে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ, হুমকিতে জীববৈচিত্র।
ঘাটাইল উপজেলার আয়তনের প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে পাহাড়ী অঞ্চল। এখানে রয়েছে ছোট ছোট টিলাসহ লালমাটির সুউঁচ্চ পাহাড়। অধিকাংশ পাহাড় ঘাটাইলের ধলাপাড়া রেঞ্জের ছয়টি বিটের অফিসের আওতায়। যা বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকা। ভ্যাকুযন্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। বছরের পর বছর একইভাবে চলছে পাহাড়ের বুকে আঘাত। দু’একটি অভিযান পরিচালনা ছাড়া প্রশাসন বা বন বিভাগের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়না। শুধু ব্যক্তিগত নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজে পাহাড়ী লালমাটি বেছে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ পাহাড় কাটায় আইন প্রয়োগের বালাই নেই।
পাহাড় কাটার মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে নিচু এলাকা ভরাট কাজে। ঘাটাইল সদর থেকে সাগরদিঘি পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে প্রায় ২০ টি স্থানে চলছে এমন ভরাট কাজ। পাহাড় কাটার ফলে যে শুধু পরিবেশের ক্ষতি হয় তা নয়। ২০১৯ সালের ৮ মার্চ উপজেলার কাত্রা মধ্যপাড়া এলাকায় ৪০ ফুট উঁচু পাহাড় কাটার সময় ভূমি ধ্বসে চাপা পড়ে বেলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
বন বিভাগের ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বনের জমিতে যে পাহাড় রয়েছে তা থেকে এক কোদাল মাটিও কাটতে দেওয়া হয়না। জনগণের রেকর্টভুক্ত পাহাড় কাটলে সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনা।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পাহাড় কাটার ফলে ওই এলাকায় ভূমিকম্প বেশি হবে। বৃষ্টি হলে পাহাড় কাটার বাকী অংশে ভূমিধ্বসের সৃষ্টি হয়ে জানমালের ক্ষতি হবে। পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে। পাহাড় কাটা বন্ধে অবশ্যই প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ হবে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত পাহাড় কাটার কোনো অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।