“”পূর্ণিমা সন্ধ্যায়, তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পাড়ের পানে উদাসী মন ধায়…”
আচমকা গান থামিয়ে চুপ হয়ে যায় কাব্য। চোখ তার সামনে প্রেমলীলায় মত্ত প্রেমিক-প্রেমিকাযুগলের দিকে। তাদের দেখতে দেখতে মন চলে যায় বছর চারেক আগের এক গোধুলী বেলায়। গোধূলি বেলার কনে দেখা আলোয় শেষবারের মতো দেখেছিল তার প্রেয়সী পূর্ণাকে।
গান ভীষণ ভালোবাসে কাব্য, শুনতে বা গাইতে দুইক্ষেত্রেই গান তার খুব প্রিয়। গানের গলাও ভালো। মনে পড়ে, সাত বছর আগের কোন এক ক্লান্ত দুপুরে পূর্ণার সাথে ওর পরিচয়ের কথা। ওর গানের সুরে মুগ্ধ হয়ে থাকা সেই তরুণীকে, যাকে দেখার পর যেন সেই মধ্যদুপুরেই নিজের সর্বনাশ দেখেছিল কাব্য সেই তরুণীটিই পূর্ণা।

হ্যাঁ, সে সর্বনাশই বটে। নিজের ভাঙ্গাচোরা জীবনের দিকে তাকিয়ে মনে হয় যথার্থই সর্বনাশ করে গেছে পূর্ণা।
অনুভূতির সর্বনাশ হয়েছে সবথেকে বেশি। পূর্ণার একমুঠো চুল ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে তার অনুভূতিকে ঘায়েল করতে পারেনি দ্বিতীয়বার।
সম্পর্কের শুরুতেই পূর্ণা জানিয়েছিল তার বাবা মায়ের ডিভোর্সের কথা। এও জানিয়েছিল ভালোবেসেই এক হয়েছিলেন তারা। একথা জানার পর কাব্য আরও বেশি ভালোবাসতে শুরু করেছিল পূর্ণাকে। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওকে কোনওদিন ওই জায়গায় দাঁড় করাবে না। সেইসাথে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল একজন ভালো স্বামীর পাশাপাশি একজন ভালো সদস্যও হয়ে উঠবে পূর্ণার পরিবারে। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা ভেবে রেখেছিলেন অন্যকিছু।
তাইতো সম্পর্কের তিন বছরের মাথায় সামনে আসে এক নিদারুণ সত্যি। যখন কাব্য পূর্ণার প্রেমে পাগলপ্রায় ঠিক তখনি ও মুখোমুখি হয় সত্যিটার। আর যে ওকে সত্যিটা জানায় সেও যেন এক ধ্রুব সত্য। শ্রাবণ, পূর্ণার প্রাক্তন প্রেমিক। যাকে ঠকানোর পরপরই কাব্যকে বেছে নেয়া হয়েছিল।
প্রতিনিয়ত নিজের মাকে গুমরে গুমরে মরতে দেখা মেয়েটা নিজের বাবা ও সেইসাথে পুরুষজাতির জন্য তীব্র ক্রোধ ও ঘৃণা নিয়ে বেড়ে উঠে। সেইসাথে ভালোবাসার করুণ পরিণতি দেখে বড় হয়ে উঠা মেয়েটা হয়ে উঠে ভালোবাসা বিদ্বেষী!
নিজের অজান্তেই হয়ে উঠে মানসিক রোগী, যাকে আমরা বলি সাইকোপ্যাথ!

বড় হওয়ার পর পূর্ণার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠে পুরুষদের নিজের ভালোবাসার নাটকে ফাঁসিয়ে তাদের অনুভুতিকে ছারখার করে দেওয়া। শ্রাবণ সহ অনেকেই আছে এই নাটকের ভুক্তভোগী, আর কাব্যর পরিণতিও সেইদিকেই যাচ্ছে হয়তো। আজ পর্যন্ত পূর্ণা কোন ছেলেকে মন দেয়নি, শুধু চালিয়ে গেছে নিজের খেলার গুটি হিসেবে।
সবটা জানার পরও শান্ত থাকে কাব্য। প্রেয়সীকে ডাকে নিভৃতে নির্জনে দেখা করার জন্য।
পূর্ণার চুলগুলো অনুভব করতে করতে অতীতে ডুব দিয়ে আসে কাব্য। পূর্ণাকে এখনও ভীষণ ভালোবাসে কাব্য। তাইতো এই চুলগুলো বিগত চার বছর ধরে আগলে রেখেছে নিজের কাছে, স্মৃতি হিসেবে।
কিন্তু পূর্ণা, সে কোথায়?
এ প্রশ্নের উত্তর কেউ জানেনা। সেদিন কাব্যর সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর থেকে আর কেউ কোনদিন পূর্ণাকে দেখেনি!
লেখা: মারিয়া আক্তার