বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে স্বাধীন চিন্তা-চেতনা এবং অন্বেষণের কেন্দ্রস্থল। সকল ভয়, দ্বিধা কাটিয়ে নিজেকে উপস্থাপনের উৎকৃষ্ট স্থান বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদেরকে নতুন অনুপ্রেরণা নিয়ে বাঁচতে শেখায়, নিজের উপলব্ধিগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে শেখায়, কথা বলতে শেখায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন কিংবা প্রথম ক্লাস নিয়ে তাই নবীনদের থাকে উৎকন্ঠা, উত্তেজনা।
গত ২৫ শে অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ইউনিট অধিভুক্ত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ – এ প্রথম বর্ষের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথম ক্লাস নিয়ে নিজেদের অনুভূতিগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
“গল্পমুখর প্রথম ক্লাস”
ভর্তি এবং ওরিয়েন্টেশন এর পর তৃতীয় বারের মতো নিজের ভার্সিটিতে আসা – বিশদ স্বপ্ন বিজড়িত চোখ দুটোর সামনে নিটার এর প্রবেশদ্বার । চোখে হালকা ঘুম এবং হৃদয়ে ভীষণ উত্তেজনা নিয়ে প্রবেশ করলাম নিটার এর প্রাঙ্গণে । অধীর অপেক্ষার পর অপরিচিত কিছু মুখের সাথে আমার প্রথম ক্লাস শুরু হয়। শিক্ষিকা ছিলেন জনাবা রহিমা আক্তার , পড়াচ্ছিলেন টেকনিক্যাল ইংলিশ । ক্যাম্পাসের নিয়মাবলী স্মরণ করানোর পর আমাদের পরিচয় পর্ব শেষ হলো। গল্পমুখর ঐ আলোচনার মাঝে কখন অপরিচিত মুখ গুলো আমার চেনা হয়ে যায় তা উপলব্ধি করতেই সময় ফুরিয়ে এলো । আমার ভার্সিটি জীবনের প্রথম ক্লাস এর অনুভূতি আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
মো. সাদমান মোকাররম দেওয়ান
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
“আমার ভার্সিটি লাইফ এর প্রথম ক্লাস”
তৃতীয় বারের মতো ক্যাম্পাসে আসা আমার। কিন্তু এবারের কারণটা ভিন্ন- ভার্সিটি লাইফের প্রথম ক্লাস। প্রথম প্রথম একটু ভয় লাগলে ও আমাদের আইপিই ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষকদের আন্তরিকতায় সেই ভয় কেটে যায় । শিক্ষকেরা প্রথমে নিজেদের পরিচয় দেন তার পর আমাদের সবার সম্পর্কে জানেন, বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করেন,কেও না বুঝলে তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন, এভাবে কোন সময়ের মধ্যে ক্লাস এর সময় ফুরিয়ে গেল টেরই পেলাম না। আমার ভার্সিটির প্রথম ক্লাস সময় স্বৃতির পাতায় স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
সামিনা হায়দার জুঁই
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
“ভার্সিটির প্রথম ক্লাস”
ছোটবেলা থেকেই ভার্সিটি জীবন নিয়ে আমাদের সবারই অন্যরকম একটা আকর্ষণ কাজ করে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে এডমিশন নামক এক ভয়ানক ঝড় পার করে আমরা প্রবেশ করি যার যার ভার্সিটি লাইফে। আমিও সেই ঝড় মোকাবেলা করে ভর্তি হয়েছি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এনকড রিসার্চ (নিটার) এ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের প্রথম দিনটিতে সবার মত আমিও আমিও খুবই উৎকন্ঠিত ছিলাম। দিনটিও ছিলো খুব সুন্দর। ক্যাম্পাসের পরিবেশ ছিলো খুবই মনোরম। প্রথম দিনেই ৩টি ক্লাস ছিল।
জারিন তাসনিম ম্যামের CSE 1101 ক্লাস দিয়ে আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের যাত্রা শুরু হয় এবং এর পর ছিল সাদিয়া আফরোজ ম্যামের ম্যাথ ও সুরাইয়া ম্যামের ফিজিক্স ক্লাস। প্রথম দিন নতুন জায়গা নতুন সব চেহারা সব কিছু মিলিয়ে যেমন একটা ভয় লাগা কাজ করছিল ম্যামদের অমায়িক ব্যবহারে তা অনেকাংশে কমে গিয়েছিলো। উনাদের ব্যবহার যেমন খুবই ভালো ছিল উনাদের পড়ানোর পদ্ধতিও তেমনই অতুলনীয় ছিলো।
সব শেষে নতুন ক্লাসমেটদের সাথে পরিচয় হওয়া সব মিলিয়ে দিনটা খুব ভালো ছিলো। সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো একটি দিন ছিলো।
শাকিবুল আলম সামি
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং
” চমৎকার অনুভূতির সাথে প্রথম ক্লাস”
প্রথম ক্লাসের অনুভূতিটা সত্যিই অদ্ভুত ছিল,উত্তেজনা আর আগ্রহ একসাথে কাজ করছিল।
প্রথম ক্লাস টা ছিল রেদোয়ান স্যার এর,স্যার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। পরবর্তী তে ফুয়াদ আহমেদ স্যার এবং সাদিয়া আফরোজ ম্যাম এর ক্লাস ছিল। ক্লাসের সবার সাথে প্রথমবার ক্লাস করার অনুভূতি টাও চমৎকার,,যা আমার জিবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হয়ে থাকবে।
রাইসা শারমিন,
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং
“উত্তেজনাপূর্ণ প্রথম ক্লাস”
ভার্সিটি জীবনে প্রথম ক্লাস কেমন ছিল সেটা নিয়ে যদি বলি, তাহলে শুরুতেই বলবো প্রথম ক্লাসটা নিয়ে আমি অনেক উত্তেজিত ছিলাম। প্রথম ক্লাস যেন কোনভাবেই মিস না হয় তার জন্য খুব তাড়াতাড়ি রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম যেন সঠিক সময় ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ আমি সঠিক সময়ে উপস্থিত ছিলাম। এরপর পর্যায়ক্রমে আমার সহপাঠীরা আসলো তাদের সাথে পরিচিত হলাম, যা অনেক আনন্দের ছিল। পরবর্তীতে রেদওয়ানুল ইসলাম স্যার ক্লাসে এসে সবার সাথে পরিচিত হলেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বললেন এবং বেশকিছু উপদেশও দিলেন। যা আমাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বলে আমি মনে করি।
প্রথম ক্লাস শেষে আমাদের আরো দুইটি ক্লাস হয়, যেখানে দ্বিতীয় ক্লাসটি নিয়েছিলেন মোঃ ফুয়াদ আহমেদ স্যার এবং তৃতীয় ক্লাসটি নিয়েছিলেন সাদিয়া আফরোজ ম্যাম। তাঁরাও তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আমাদের কিছু উপদেশ দেন যা সত্যিই অনেক আগ্রহী করে তোলে আমাকে।
পরিশেষে নতুন ক্যাম্পাস,নতুন ক্লাস,নতুন সহপাঠী সবকিছু মিলে সেই সঙ্গে নিজেকে যেন মনে হতে থাকে আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই দিনটা আমার কাছে অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মো. সাদিকুল ইসলাম
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং
” ভার্সিটি জীবনের প্রথম ক্লাস”
ভার্সিটি হলো সদ্য কলেজ শেষ করে নতুন আরেকটি যাত্রা। আর এখানে প্রথম দিন বা প্রথম ক্লাস নিয়ে সবাই ই কম বেশি এক্সাইটেড থাকে৷ আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আজকে আমার ভার্সিটি জীবনের প্রথম ক্লাস ছিল। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো লাগছে।
আমাদের আজকে তিনটা ক্লাস ছিল।
দিদারুল ইসলাম স্যার, জারিন তাসনিম তামান্না ম্যাম,আলভি আল সৃজন স্যার ক্লাস নিয়েছিলেন। প্রথম দিন ভালোই লাগলো ক্লাস গুলো।
আর আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশের প্রথম দিন ছিল যা খুবই অসাধারণ ছিল আলহামদুলিল্লাহ।
নেঘলা তাসফিয়া
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
“বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিনের অনুভূতি”
স্কুল-কলেজ পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আগ পর্যন্ত প্রত্যেক্যটা ছাত্র-ছাত্রীর অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্র পাড়ি দিতে হয়। এই যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হয়ে নিজের কাঙ্ক্ষিত স্থান লাখ ও হাজার ভিড়ের মাঝে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরা, খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে। শত প্রত্যাশার, স্বপ্নে বোনা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেখানকার একজন শিক্ষার্থী
হয়ে যেদিন প্রথম পদাচারন করা হয়, সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
প্রথম যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় যাই বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আজই আমার স্বপ্ন পূরণের দিন।
তাই হয়ত এই অনুভুতিটা এতো অনন্য। অবশ্য এই আনন্দের সাথে কিছুটা ভয়ের মিশ্রণও ছিল। নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, নতুন এক জীবনের সূচনা।কিন্তু এই ভয়ের অনেকটাই কমে গিয়েছিল যখন নিজ ডিপার্টমেন্টের নিজ ক্লাস রুমে যাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষগুলো এতটা আপন করে কাছে টানে! যদিওবা সবাই সেদিন অপরিচিত মুখ। সবার সাথে সবাই পরিচিত হওয়া, একসাথে ক্লাস শেষে সময় কাটানো, খাওয়া-দাওয়া, এর মাঝে একে অন্যের সম্পর্কে জানা। আর একটা সময় পার হতেই তারা হয়ে ওঠে অতি-পরিচিত মুখ।
প্রথম দিনে শিক্ষকদের সাথে অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে খুবই সুন্দর। ডিপার্টমেন্ট প্রধান থেকে শুরু করে সব শিক্ষক তাদের নিজ নিজ পরিচয় তুলে ধরে নিজ নিজ অভিজ্ঞতা নতুনদের সাথে শেয়ার করে।।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিনে এক শিক্ষক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন,”একটি পন্য তৈরি করতে যেমন মেশিনকে ভাল থাকতে হয়,তেমনি ভাল থাকতে হয় কাঁচামালকেও। আর বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই মেশিনের মতো,আর শিক্ষার্থীরা হলো এখানকার কাঁচামাল।আর এর একটির ও সমস্যা হলে বিনষ্ট হবে দুইটিই। অনেকেই আবার প্রথম বছর হেলায় না কাটানোর কথা বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের রীতি নীতি তুলে ধরেন।বিশ্ববিদ্যালয় যে একটি পরিবার থেকে কম নয় বরং বেশি, সেটা বুঝতে পারি যখন বড় ভাইয়া- আপুদের সাথে আলাপ হয়।শিক্ষকদের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পথ- নির্দেশকও বলা চলে।প্রথম পদচারণের দিনটাতে পরম স্নেহেই বরণ করে নেয় আমাদের।সেদিনটি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সর্বদা তাদের নিজের পাশে পেয়ে আসছি।প্রথম দিনটাতে তাদের দেখে খুব ভালো লাগলো ।আর এখন তাদের থেকেই পথ- নির্দেশনা নিয়ে নিজ গন্তব্যে পৌছাতে চাই,শিখতে চাই কিভাবে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে হবে। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আর ছাত্রীই শুধু বলতে পারবে সেই মুহূর্তটার আনন্দ কত গভীর । জীবনের এক স্মৃতিমাখা দিন এটি যা সারা জীবন এক অনন্য অনুভূতি হয়ে গচ্ছিত থাকবে।
মো. আরাফাত হোসেন রাফি
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
“পছন্দের ডিপার্টমেন্টে প্রথম ক্লাস”
প্রিয় ভার্সিটির পছন্দ করা ডিপার্টমেন্ট এর প্রথম ক্লাস খুবই সুখকর ছিলো। রেদওয়ান স্যারের ভার্সিটি লাইফ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া , বড়দের সাথে মার্জিত ব্যবহার, বিপদে পড়লে স্যার-ম্যামদের নিঃসংকোচে বলা, ইত্যাদি সব বুঝিয়েছেন বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে। সাদিয়া ম্যাম আমাদের পরিচয় নেওয়ার সাথে তার নিজের শিক্ষা জীবনের কথা বলেছেন এবং সহযোগিতামূলক কথা-বার্তা বলেছেন, আর ফুয়াদ স্যারের অমায়িক আচরণ আমাদের মুগ্ধ করেছে যদিও তিনি আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর না। সর্বোপরি আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি এই ভার্সিটির শিক্ষার্থী হতে পেরে গর্বিত।
খাদিজা তুল কুবরা
প্রথম বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং