নববর্ষ এল আজি
দুর্যোগের ঘন অন্ধকারে;
আনে নি আশার বাণী,
দেবে না সে করুণ প্রশ্রয়।
প্রতিকূল ভাগ্য আসে
হিংস্র বিভীষিকার আকারে;
তখনি সে অকল্যাণ
যখনি তাহারে করি ভয়।
……… কবি গুরু………
বছর ঘুরে আবার এলে শুভ নবর্বষ, তাই বাঙালির মনের কোণে জমেছে এক আনন্দ। যে আনন্দের কোন সীমারেখা নেই। নবর্বষ হচ্ছে বাঙালি জাতির এক আনন্দের জোয়ার। যেখানে সবাই একসাথে আনন্দ করার সুযোগ পায়, এখানে নেই কোন সাম্প্রদায়িকতার চিহ্ন। এখানে সব বাঙালি এক কাতারে এসে আনন্দ উদযাপন করে।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সব মানুষ, সব বাঙালি সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সমগ্র জাতি একই হৃদয়াবেগে একটি মোহনায় মিলিত হয়ে পালন করে এই সর্বজনীন উৎসব। চিরায়ত বাঙালিত্বের অহংকার আর সংস্কৃতির উদার আহ্বানে জাগরুক হয়ে নাচে-গানে, গল্পে-আড্ডায়, আহারে-বিহারে চলে নতুন বছরকে বরণ করার পালা।বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালিদের জীবনে সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব।
এই সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িককতার কারণে আমরা বিজয় অর্জন করছিলাম মহান মুক্তিযুদ্ধে।যা বাঙালি জাতির এক মহা বিজয়।
নববর্ষ বিদায়ী বছরের দুঃখ গ্লানি মুছে দিয়ে সব বাঙালির মনে উড়ায় নতুনের কেতন। চেতনায় বাজায় মহা মিলনের সুর, বাঙালির সব ভেদাভেদ ভুলে দাঁড় করায় এক সম্প্রীতির মোহনায়।
তবে বাঙালির নববর্ষ সব বাঙালির কাছে একভাবে আসেনি। কারো কাছে এসেছে খরা হয়ে, কারো কাছে খাজনা দেওয়ার সময় হিসেবে, কারো কাছে বকেয়া আদায়ের হালখাতা হিসেবে, কারো কাছে মহাজনের সুদরূপে আবার কারো কাছে এসেছে উৎসব হিসেবে।
আজ আমরা একটা জিনিস ভুলে যেতে বসেছি তা হচ্ছে নববর্ষের সৃষ্টি হয়েছিল মূলত কৃষকদের কাজের সহযোগিতা করার জন্য। সম্রাট আকবরের শাসনামলেই সৃষ্টি হয়েছিল বাঙালি এই মহা আনন্দের উৎসব। তার মন্ত্রী আবুল ফযলের নেতৃত্ব রাজজ্যোতিষী আমীর ফতেউল্লাহ সিরাজীর সূক্ষ্ম হিসাব-নিকাশ বিবেচনায় শুভক্ষণ গণনার দিন হিসেবে পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ উদযাপনের দিন ধার্য করা হয়।