রাবি প্রতিনিধি:
বেদে সম্প্রদায়ের যাপিত জীবনের গল্প নিয়ে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘বেদের মেয়ে’ নাটক। যে গল্পে ছিল সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ও আনন্দ-বেদনার মিশেল। বেদের মেয়ে চম্পাবতীর আত্মবিসর্জন ও বেদনা শৈল্পিকভাবে চিত্রিত করেছেন কবি। বিয়োগান্তক এ গল্প নিয়েই সমকাল নাট্যচক্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্চায়ন করেছে দর্শকপ্রিয় নাটকটি ।
সমকাল নাট্যচক্রের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। সাজু সরদারের নির্দেশনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অন্তরা হালদার, এম এ হাদী, সানজীদ সালভি, উজ্জ্বল হোসেন, জাহিদ হোসেন, রিন্তু তনচংগ্যা, আফসারা মাহজাবীন, ফাতেমা বিনতে রহমত, ইমন, টনি, হিরাময়, সোলায়মান প্রমুখ।
নাটকের মূল চরিত্র চম্পাবতী। করুণ জীবনকাহিনীর মধ্য দিয়ে গ্রামবাংলার বেদে জাতির জীবনযাত্রার এক চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছে চরিত্রটিতে। আদর্শ বেদে নারীর প্রতীক ‘চম্পাবতী’। তার রূপে মোহাচ্ছন্ন হয়ে লোভী ও দুশ্চরিত্রবান মোড়ল তার পেশিশক্তির জোরে চম্পাবতীকে কেড়ে নেয়। অসহায় স্বামী গয়ার প্রতিবাদ কোনো কাজেই আসে না। নিরুপায় গয়া চম্পাবতীকে রেখেই তার বেদের বহর নিয়ে চলে যায় অন্যত্র। চম্পাবতীকে হারিয়ে গয়া ফের বিয়ে করে সংসারী হয়।
অন্যদিকে চম্পাবতীর বেদেজীবনের উচ্ছলতা, হাসি-আনন্দ আটকে পড়ে মোড়লের ঘরের চার দেয়ালের বন্দি জীবনে। একসময় মোড়লের কাছে চম্পাবতীর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। বিতাড়িত চম্পাবতী আবার ফিরে আসে বেদে জাতির কাছে। কিন্তু গয়া তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না। স্বামীর অবহেলা আর লাঞ্ছনা বুকে নিয়ে চম্পাবতী অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমায়। কিন্তু যখনই শুনতে পায় তার স্বামীকে বিষধর সাপে দংশন করেছে, সব ভুলে সে ফিরে আসে। স্বামীর শরীর থেকে সব বিষ চুষে নেয়। স্বামী গয়া বেঁচে ওঠে আর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে চম্পা। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী।
নাটকের নির্দেশক ও সমকাল নাট্যচক্রের সভাপতি সাজু সরদার বলেন, ‘বর্তমানে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা অবদান রাখছে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নারীর ভূমিকা আজ দৃশ্যমান। নারীর ভূমিকার কারণেই সমাজে তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু এখনো নারীদের প্রতি সহিংসতা নির্যাতনের ঘটনা অহরহই ঘটছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরুষরূপী একশ্রেণির শোষক গৃহ অভ্যন্তরে নারীদের শোষণ করছে। ক্ষমতা আর প্রতিপত্তিকে পুঁজি করে এই শোষকরা নারীদেও অপমান অপদস্থ করে। আর নারীরা মুখ বুজে সকল অত্যাচার সহ্য করে নিজেদের আত্মহুতি দেয়। আমরা আধুনিক হলেও নারীরা যে প্রতিনিয়তই বঞ্ছনার শিকার হচ্ছে সেটি প্রকাশ করতেই আমাদের এই পরিবেশনা।’
উল্লেখ্য, ‘নাটক শাণিত হচ্ছে, শোষকেরা সাবধান’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৮১ সালের ২৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু সমকাল নাট্যচক্রের। শ্যামল ভাদুড়ীর ‘তথাপি সূর্য আসে’ নাটক মঞ্চস্থের মধ্য দিয়ে সমকালের নাট্যচর্চা শুরু। এ পর্যন্ত মঞ্চ নাটক ও পথনাটকসহ সব মিলিয়ে সংগঠনটি ৬৭টি নাটক প্রযোজনা করেছে।