একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকে মুক্ত আঙ্গিনা যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী নিজেকে তুলে ধরতে পারে, তৈরি করে অপার সম্ভাবনা। চিন্তার জগৎ পরিবর্তনে এবং আত্মার সংশোধনে নিজেকে আরো মেলে ধরতে পারে একজন শিক্ষার্থী। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারগুলো যদি তার চিন্তা-ভাবনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল উদ্দেশ্যই বাধা হয়ে দাড়ায়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনও স্কুল নয়! এতে অনেক কিছুই বিদ্যমান। পশ্চিমা বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান চর্চার মঞ্চ, উদ্ভাবনের স্ট্রাকচার। সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার, পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের পথদ্রষ্টা। যার উদ্দেশ্য হলো নিজেকে সময়ের সাথে উন্নত করবে, শেখাবে তার সাথে যুক্ত থাকা সবাইকে। যেমনটা এক ছোট্ট চঞ্চল শিশু, পরিবার থেকে শিখে, প্রকৃতি থেকে শিখে, সান্নিধ্যের মেন্টর থেকে যার দরূন তার পথচলা সহজ হয়। নিজেকে তুলে ধরার পর শত শত মানুষের জীবন আমূল পরিবর্তন করতে পারে। উল্টোটাও তেমন সত্য। সবাই চায় নিজের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করতে। যে ভাবনা এবং স্বপ্ন নিয়ে ঢোকা হয়, তা নিদারুণ ক্রমহ্রাসমান এ চলতে থাকে যখন হিতে বিপরীত হয়। পরিবার থেকে দূরে থেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয় খুব করে। তার উপর একজন ভালো মেন্টর ছাড়া অনেক ভুলের মাশুল দিতে হয়। তারপরও উঠে দাড়াতে পারে নিজের মতো করে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলছি। বাহিরে তাকাতে হবে না, আমাদের দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেমের দিকে একটু খেয়াল করুন এবং তুলনা করুন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। আবাসিক হল, খোলা ময়দান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সব মিলিয়ে আমি নিশ্চিত তাদের আউটপুট দেখে ভাবনায় অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। কোভিড-এর পর বর্তমান সময় অনেক আপডেটেড। এর মধ্যে যদি একজন শিক্ষার্থীকে কনভেশনাল পদ্ধতির ভোগান্তির শিকার হতে হয়, এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় নিজের। অবশ্যই একদিনে পরিবর্তন চাই না আমরা এবং এটি সম্ভবও নয়, কিন্তু পরিবর্তনের ধারাটুকু যেন বিদ্যমান থাকে। দয়া করে সরকারি কাজ বলে কাজ থামিয়ে রাখবেন নাহ, শতশত স্টুডেন্ট-এর জীবনকে নিয়ে খেলবেন নাহ। এই আমরাই আপনাদের দেখে ক্রমান্বয়ে শিখে যাবো এবং লোকমুখে আপনার কথাই শুনবেন। অভিযোগ এর কিছু পাচ্ছেন নাহ?
সমস্যাগুলো নিয়ে আলোকপাত করা যায়—
১) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে একটু গিয়ে দেখেন। খাবার ব্যবস্থাপনার ব্যাপারটিতে একটু জোর দেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করুন। আমাদেরটা নিজের ক্যান্টিন মনে হয় কি? বাজেট নেই? আমাদের বড় ভাই আপনাদের সাথে যোগাযোগ করছে কিনা দেখুন মেইলে। কতকিছু কিনা করতে চাচ্ছে! ক্যাফেটেরিয়া নেই কেন?
২) ফর্ম ফিলাপে কেন এত ভোগান্তি? কেন হল ও লাইব্রেরি ক্লিয়ারেন্স আধুনিকায়ন করা হচ্ছে নাহ। একই তথ্য কেন বারবার ফিলাপ করে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়।
৩) বিশ্ববিদ্যালয় এর কতভাগ শিক্ষার্থী হল পেল তার একটু তালিকা করুন। আপনারা না পারলে আমাদের বলুন। আমরা স্ট্যাটিসটিকস দেখাচ্ছি।
৪) টেক্সটাইল এ কেন বাজেটে পিছিয়ে আমরা? পলিসি মেকাররা কেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে?
৫) কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ হলে কেন ফ্যান/ওয়াইফাই নেই? বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পরিদর্শন করে আসুন। কাছেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আসুন।
৬) কেন একটি নোটিশ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর খুব দেরিতে স্টুডেন্টদের হাতে আসে?
৭) লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ধাচের নতুন বই কেন আনা হচ্ছে না কেন?
৮) মার্কশিট তুলতে এত সময় কেন লাগে? কেন মাঝের প্রসেস গুলো কমানো হচ্ছে না। কেন ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে নাহ ওয়েবসাইট?
ব্যাপার গুলো একটু দেখে রাখেন। একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় চেষ্টা করে সিস্টেমকে আরো কার্যকর করতে। আমাদের স্টুডেন্টদের মধ্যে একটি অংশ আপনাদের সিদ্ধান্ত কমিটিতে রাখেন যারা আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। আপনাদের সমস্যা গুলো তুলে ধরবে। এলামনাই রাখেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি লিডার ভাইদের সাথে যোগাযোগ করেন।
এই সামান্য পরিবর্তনে যে উন্নতি গুলো গত ১২ বছরে হয় নি, আগামী ১ বছর এ দেখতে পারবেন যদি ধারা বজায় থাকে। আমাদের অনুজদের জন্য পথ চলতে যাতে সহজ হয়।
হয়তোবা আপনারা সমাধান এর কথা বলে কথা গুলো রাখলেন নাহ। কিন্তু যদি রাখেন, শিক্ষার্থীরা আপনাদের মনে রাখবে, মন থেকেই বলবে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করেছে আমাদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিজের ধরে ভাবুন। পরিবর্তনের রোল মডেল আমাদের হাতেই আসবে কারণ অর্থনীতির বিলিয়ন ডলার এর অংশটুকু আমাদের হাত থেকেই আসে।
শেখ মাঈনুদ্দিন,
তৃতীয় বর্ষ, ডাইজ এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
বুটেক্স