আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, “বারো মাসে তেরো পার্বণ।” প্রতিটি ধর্ম বর্ণের মানুষ নির্বিশেষে যার যার ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে উৎসবগুলো নতুন আমেজের সাথে উদযাপন করে। তেমনি দূর্গাপূজা হল শক্তির অধিষ্ঠাত্রী পার্বতীদেবীর দুর্গা রূপের উপাসনার উৎসব। দূর্গাপূজা শরৎ (আশ্বিন) এবং বসন্ত (চৈত্র) ঋতুর শুক্লপক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সাভারের নয়ারহাটে অবস্থিত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রিসার্চ (নিটার) এর শিক্ষার্থীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। পূজোর ছুটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা ছিলো দেখার মতোন। তাদের পূজোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো তা জানিয়েছেন আমাদের।
“ঘোটকে চড়ে দেবী ফিরেছেন কৈলাসে”
বছর ঘুরে অন্নপূর্ণার আগমনে দেশের মন্দির-মণ্ডপে আনন্দের যে লহর বইছিল, দশমী তিথিতে মাকে বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দূর্গা পূজা।
দশমীতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খনাদ আর উলুধ্বনিতে পূজা মণ্ডপে চলছিল দেবীর কাছে মঙ্গলকামনা। আনন্দ উৎসবের এই মুহূর্ত শেষ হয় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ফের দেবীকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানাতে অপেক্ষা করতে হবে এক বছর।
বিজয়ার এদিন ঘোটকে চড়ে দেবী ফিরে গেছেন কৈলাসে।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ পৃথিবীতে আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
আমাদের বিশ্বাস দেবী দূর্গা তার অপার মহিমায় ভক্তের প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে আমাদের জীবনে শান্তিময় করে দেবেন। বিজয়া দশমীতে আমরা অশ্রুজলে মাকে বিদায় দেই এবং মায়ের কাছে এই প্রার্থনা করি।
জয় ঘোষ
দ্বিতীয় বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং।
“আবারো এসো মা”
“দুর্গাপূজা” প্রতিটা সনাতনী ৩৬০ টি দিন অপেক্ষায় থাকে শুধু পূজোর ৫ টি দিনের আশায়।
শুধু দেবী রূপে নয়, মা আসেন আমাদের ঘরের মেয়ে হয়ে। মেয়েরা যেমন বিয়ের পর বাপের বাড়ি আসে অল্পকিছু দিনের জন্যে মা পার্বতী ও ঠিক তেমনিভাবে আসেন এই ৫ টি দিনের জন্য।
মা জগৎ জননী- সকল সৃষ্টির “মা”। তার সকল সন্তানকে তিনি শুভ বুদ্ধি দান করুন এবং সুস্থ সুন্দর রাখুক তার এই ধরাকে।
আবার এসো মা অপেক্ষায় থাকবো আমরা।
দিপান্বিতা গোস্বামী (তাথৈ)
দ্বিতীয় বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং।
“পুনরায় এক বছরের অপেক্ষা শুরু”
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠে ঘুম ভেঙে বাঙালির সূচনা হয়-পিতৃপক্ষের সমাপ্তি আর দেবী পক্ষের সূচনায় মহালয়া তিথির আবির্ভাব, অর্থাৎ দুর্গাপূজার শুরু হয় সেখান থেকে। আমার পূজোও মূলত সেদিন থেকেই শুরু। এক বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে সেদিন।
প্রতিবছরের মতো এবারও পূজায় চট্টগ্রামে মামার বাড়ি ছিলাম। ষষ্ঠীর দিন চলে যাই মামার বাসায়। আমরা কাজিনরা সহ ১৪ জন ভাই, ৪ জন বোন। বছরে একবারই আমরা সবাই একত্র হই মামার বাসায় আর সেটা দূর্গাপূজার সময়। প্রতিদিন ৩০+ মন্ডপে ঠাকুর দেখতে দেখতে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী কখন চলে যায় টেরই পাই না। এবারও সেটার ব্যতিক্রম নয়। দশমী তে পুষ্পাঞ্জলির পর শাড়ি পাঞ্জাবী পরিধান করে সিঁদুর খেলা আর ধুনুচি নাচের মাধ্যমে শেষ হয় এবছরের আনন্দের আসর। তারপর বিসর্জনের জন্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সি-বীচে যাই সবাই মিলে। সেদিন উমা মায়ের কৈলাস যাত্রার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে তাঁর বাপের বাড়ি ভ্রমণ, সমাপ্তি ঘটলো এইবছরের শারদীয় দূর্গা পুজার। পুনরায় এক বছরের অপেক্ষা শুরু।
মহালয়া দিয়ে শুরু করে পুজো আসার অনুভূতি টাই আলাদা। আবার নবমীর শেষ রাতের পর মন টা খারাপ হয়ে যায় পুনরায় এক বছরের অপেক্ষার কথা ভেবে৷
“আসছে বছর আবার হবে”
অমর্ত্য চৌধুরী
দ্বিতীয় বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।
” আসছে বছর আবার হবে”
‘দূর্গা পুজা ‘ শুরু হওয়ার কয়েকমাস আগে থেকেই যেন মনের মধ্যে এক আনন্দধারা বয়ে চলে।এইতো আর কয়েকটি দিন মাত্র এরপরই পূজা শুরু হয়ে যাবে । ৩৬৫ দিনের অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে মহালয়া শুরু হওয়ার মাধ্যমে একটা অনুভুতি জেগে উঠে যে পূজা তো শুরু হয়ে যাচ্ছে। সকলে কেনাকাটা শেষ করে ঠাকুর দেখতে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে কোথায় কোথায় ঘুরবো তার পরিকল্পনা শুরু করে ফেলে। সকল আত্মীয়সজন পূজার ছুটিতে বাড়িতে আসায় বাড়িটা যেন তার হারানো প্রাণ ফিরে পায়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর ঘোরাঘুরি শেষ করে দশমীতে মা দুর্গার বিদায় বেলা এসে পরে। শাড়ি, পাঞ্জাবি পরিধান করে সিঁদুরখেলা আর ধুনুচি নাচের মাধ্যমে শেষ হয় এ বছরের আনন্দের আসর, মা দূর্গাকে বিসর্জনের জন্য নদীর তীরে সবাই মিলে শেষ বিদায় জানিয়ে সকলের কন্ঠে বেজে উঠে , “আসছে বছর আবার হবে, আসছে বছর আবার হবে”।
পার্থ পাল
দ্বিতীয় বর্ষ, ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং।